মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়
ফারায়েজ হচ্ছে ইসলামীক আইন ও হিসাব বিজ্ঞানের এমন একটি নীতিমালা যাহা দ্বারা মৃত্যু ব্যেক্তির স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি তার অয়ারিশদের মধ্যে বন্ঠন করা হয় । আর এই বন্ঠন নীতিমালা আল্লাহ তায়ালা সঠিকভাবে সকলকে বুঝার এবং জানার জন্য পবিত্র আল-কোরআন ও হাদিসে এর বিস্তারিত নিয়মবলী বর্ণনা করেছেন । যাতে করে মানবজাতী সঠিক নিয়ম জানতে এবং বুঝতে পারে । এবং আল-কোরআন ও হাদিসের এই নিয়মবলীর সমষ্টিকে ইসলামী ফারায়েজ বলা হয় ।
সম্পত্তি ফারায়েজ /বন্ঠন করার আগে এই কাজ গুলো করতে হবে :
মৃত্যু ব্যেক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কিছু কিছূ বিষয় আছে যাহা দেওয়ার পর বাকি যে সম্পত্তি থাকবে তাহা বন্ঠন করতে হবে । আর এই ব্যাপারে আল-কোরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে ।
মৃত্যু ব্যেক্তির দাপন-কাপনের খরজ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে দিতে হবে ।
মৃত্যু ব্যেক্তি কোনো ঋণ থাকলে তাহা পরিশোধ করতে হবে
মৃত্যু ব্যেক্তি কোনো অসীয়াত থাকলে তাহা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে দিতে হবে ।
মৃত্যু ব্যেক্তির স্ত্রী দেনমোহর বাকি থাকলে তাহা মৃত্যু ব্যেক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে দিতে হবে ।
মৃত্যু ব্যেক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে উক্ত দায়ভার গুলো পরিশোধ করার পর বাকি সম্পত্তি তার রেখে যাওয়া অয়ারিশদের মধ্যে বন্ঠন করতে হবে । আর এই অয়ারিশদের মধ্যে ও কয়েক প্রকারভেদ আছে । যাহার উপর ভিত্তি করে তাদের অংশ্য কোরআন ও হাদীসে নির্ধারণ করা হয়েছে ।
ইসলামী আইনে মৃত্যু ব্যেক্তির ওয়ারিশদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
ক) যাবিল ফুরুজ বা প্রথম শ্রেণীর অংশীদার
খ) আসাবা দ্বিতীয় শ্রেণীর অংশিদার
গ) যাবিল আরহাম তৃতীয় শ্রেণীর অংশীদার
যাবিল ফুরুজ বা প্রথম শ্রেণীর অংশীদার এর সংজ্ঞা:
যে সকল অয়ারিশগন কোনো অবস্থায় অংশ হতে বঞ্চিত হবে না এবং যাদের অংশ্য পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট বলা আছে । সে সকল অয়ারিশদের যাবিল ফুরুজ বলা হয় । এদের সংখ্যা মোট ১২ জন তার মধ্যে ৪ জন পুরুষ আর ৮ জন মহিলা
পুরুষগণ হলেন:
(১) পিতা (২) পিতার পিতা বা দাদা (৩) স্বামী (৪)বৈপিত্রিয় ভাই (একই মাতা কিন্তু সৎ পিতার অরশজাত পুত্র)
মহিলাগণ হলেন:
(১) মাতা – (২) পিতার মাতা বা দাদী – (৩) স্ত্রী- (৪) কন্যা (৫) পুত্রের কন্যা (৬) সহোদর বোন (৭) বৈপিত্রিয় বোন (একই মাতা কিন্তু সৎ পিতার অরসজাত কন্যা সন্তান ) (৮)বৈমাত্রিয় বোন (একই পিতা কিন্তু সৎ মাতার অরসজাত কন্যা সন্তান )
আসাবা দ্বিতীয় শ্রেণীর অংশিদার এর সংজ্ঞা:
যাবিল ফুরুজ অয়ারিশদের দেওয়ার পর অবশিষ্ট যারা মালিক হয় তাদেরকে আসাবা বা অবশীষ্টভোগী বলা হয় ।
আসাবা বা অবশীষ্টভোগী মোট ১৮ জন যাহা কোরআন ও হাদিসে নির্ধান করা হয়েছে ।
(১)পুত্র (২)পুত্রেত পুত্র বা নাতী (৩)পিতা (৪) পিতার পিতা বা দাদা (৫)সহোদর ভাই (৬)সহোদর বোন (৭)মৈমাত্রিয় ভাই (৮)বৈমাত্রিয় বোন (৯)সহোদর ভাইয়ের পুত্র (১০)বৈমাত্রিয় ভাইয়ের পুত্র (১১)সহোদর ভাইয়ের পত্রের পুত্র (১২)বৈমাত্রিয় ভাইয়ের পুত্রের পুত্র (১৩)সহোদর চাচা (১৪)বৈমাত্রিয় চাচা (১৫)সহোদর চাচার পুত্র (১৬)বৈমাত্রিয় চাচার পুত্র (১৭)সহোদর চাচার পুত্রের পু্ত্র (১৮)বৈমাত্রিয় চাচার পুত্রের পুত্র
যাবিল আরহাম তৃতীয় শ্রেণীর অংশীদার এর সংজ্ঞা:
দ্বিতীয় শ্রেণির অংশিদারের অনুপস্থিতিতে যাহারা সম্পত্তির মালিক হয় তাদেরকে যাবিল আর-হাম বা তৃতীয় শ্রেণীর অংশীদার বলা হয় । এদের সাথে মৃত্যু ব্যেক্তির কোনো প্রকার রক্তের সম্পর্ক নায় । আছে শুধু আত্মীয়তার সম্পর্ক । স্ত্রী লোকদের মাধ্যমে সম্পর্কিত উত্তরিাধিকারগণ এই শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত । এদের সংখ্যা মোট ১৯ জন
(১)কন্যার সন্তান ও তাদের বংশধর (২)পুত্রের কন্যা সন্তান ও তার বংশধরগণ (৩)মায়ের মা বা নানী (৪)মায়ের পিতা বা নানা (৫)আপনভাইয়ের কন্যা (৬)বৈমাত্রিয় ভাইয়ের কন্যা (৭)আপন বোনের কন্যা (৮)বৈমাত্রিয় ভাইয়ের পুত্র/কন্যা (৯) )বৈমাত্রিয় বোনের পুত্র/কন্যা (১০)বৈপিত্রিয় বোনের পুত্র/কন্যা (১১)সহোদর ফুফু (১২)বৈমাত্রিয় ফুফু (১৩)বৈপিত্রিয় ফুফু (১৪)বৈপিত্রিয় চাচা (১৫)সহোদর মামা (১৬)সহোদর খালা(১৭)বৈমাত্রিয় মামা (১৮)বৈপিত্রিয় মামা (১৯)বৈপিত্রিয় খালা ।
ইসলামী উত্তারাধির আইনে যারা উত্তারাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে
ইসলামী উত্তরাধির আইনে কিছু ব্যেক্তিবর্গকে সম্পত্তির অংশ্য হতে বঞ্চিত করা হয়েছে । সে সকল বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো ।
(১)দাসত্ব কেননা দাসের নিজস্ব বলতে কিছু নায় ।
(২)ধর্মের পার্থক্য: মুসলমান এবং অমুসুলমানদের মধ্যে আত্মীয়তা তাকরেও তারা সম্পত্তির অংশ্য পাবেনা ।
(৩) হত্যাকারী : যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে কেও কাহকে হত্যা করে তাহলে হত্যাকারী তার সম্পত্তির অংশীদার হবেনা । কেননা হত্যাকারী কোনো অয়ারিশ হতে পারেনা ।
(৪) অবৈধ পুত্র : জারজ সন্তান অবৈধ তাই পিতার সম্পত্তির অংশিদার হবেনা ।
(৫)সৎ পুত্র/কন্যা: সৎ পুত্র এবং সৎ কন্যা মাতার অংশিদার হতে বঞ্চিত । তেমনীভাবে মাতা ও সৎ পুত্র/কন্যার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত ।
(৬)নিরুদ্দেশ ব্যেক্তি: কোনো নিরুদ্দেশ ব্যেক্তি হানাফি আইন অনুসারে তাহাকে ৯০ বছর পর্যান্ত জীবত থাকা গণ্য করে । কিন্তু নিরুদ্দেশ ব্যেক্তির আত্মীয়বর্গ ৭/সাত বছর জীবত থাকার সংবাদ না পেলে তাকে মৃত্যু বলে গণ্য করতে পারবে ।
(৭) সম্পর্ন্য অংশ চ্যুত্তি : পিতার উপস্থিতে নির্ম্মগামী অয়ারিশগন বঞ্চিত হবে ।
(৮) অসম্পর্ন্য অংশ চ্যুত্তি : কোন অংশিদার একভাবে অংশ হতে বঞ্চিত হয় কিন্তু অন্যভাবে সে সম্পত্তি পেয়ে থাকলে তাকে অসম্পর্ন্য অংশ চ্যুত্তি বলা হয় ।