জোত এবং খতিয়ান এর মধ্যে পার্থক্য
জোত এবং খতিয়ান নাম্বার সম্পর্কে জানতে হলে – আগে আমাদের জানতে হবে- একটা খতিয়ান কিজন্য তৈরী করা হয় । আমরা যখন একটা জমির মালিকানা প্রমান করতে যায় তখন আমাদের সামনে যে সকল দলিলপত্র উপস্থাপন্ করা হয় – তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ্য দলিল হলো খতিয়ান – যাহাকে আমরা মালিকানা স্বত্বলিপি হিসাবে চিনে থাকি । আর এই মালিকানা স্বত্বলিপি তৈরী করা হয় একটা জমির রেকর্ড সংশোধনের মাধ্যমে ।
নীতিমালা অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের উপায় হলো দুইটা
১/ সরকার কর্তৃক রেকর্ড : সরকারি জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন ।
২/নামজারি: নামজারির মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন
ব্রিটিশ আমল থেকে জমিদারগণ প্রজাদের নিজ নিজ মালিকানা বুঝিয়েদেওয়ার জন্য ভূমি জরিপ প্রচালিত করে । আর এই জরিপের মাধ্যমে প্রতেক মালিকের নিজ নিজ মালিকানা স্বত্বলিপি বা খতিয়ান প্রস্থুত করা হয় । যাহা কিনা এখন সরকার কর্তৃক প্রচালিত হয় । এই সকল জরিপ সরকার ২৫ থেকে ৩০ বছর পর পর করে থাকে । এই হলো সরকার কর্তৃক রেকর্ড সংশোধন। আর এই রেকর্ড সংশোধনের মাধ্যমে তৈরী করা হয় খতিয়ান – নকশা বা ম্যাপ ।
খতিয়ানের নাম্বার এবং জোত নাম্বার কি?
দেখুন যখন একটা জরিপ প্ররিচালনা করা হয় তখন ঐ জরিপের সকল তথ্য গুলো পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং জরিপের সর্ব শেষ পর্যায় এসে সকল রেজিষ্ট্রার যাচায় বাচায় করা হয় । এবং উক্ত সকল রেজিষ্ট্রারের আলোকে চুড়ান্ত প্রকাশের জন্য আবার দুইটা রেজিষ্ট্রার বা বালাম বইতে লিপিদ্ধ করা হয় । যাহাকে আমরা ১ নাং রেজিষ্ট্রার এবং ২ নাং রেজিষ্ট্রার বলে থাকে ।
১ / নাম্বার হলো: তলবকারী রেজিষ্ট্রার বা খতিয়ান রেজিষ্টার
২/ নাম্বার হলো : জোত রেজিষ্ট্রার বা খাজনাসহ রেকর্ড হালনাগাদকর রেজিষ্ট্রার ।
১ নাম্বার রেজিষ্ট্রার নিয়ে আলোচনা
ভূমি জরিপ করার সময় যখন স্বরাজমিন থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং রেকর্ড রুম থেকে নেওয়া বিভিন্ন তথ্যটির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় একটা খতিয়ান বা মালিকানা স্বত্বলিপি।
আর একটা খতিয়ান বা মালিকানা সত্য লিপি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সেটা কয়েকটা রেজিস্টারের রেজিস্টার ভুক্ত করা হয়।
এবং উক্ত সকল রেজিস্টারের বিভিন্নভাবে নামকরণ করা হয়।
একটা মৌজায় জরিপ করার সময় ঐ মৌজার সকল মালিকের নাম এবং বিস্তারিত তথ্য দিয়ে মালিকানা স্বত্বলিপি সহ একটা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয় যেটাকে আমরা খতিয়ান বলে থাকি।
আর একটা খতিয়ান নির্দিষ্ট মালিক কে চিহ্নিত করার জন্য বা নির্দিষ্ট মালিককে ইনটিকেট করার জন্য একটা ক্রমিক নাম্বার দ্বারা সেটা চিহ্নিত করা হয় যাতে করে খুব সহজে উক্ত মালিকের মালিকানা স্বত্বলিপি খুব সহজে বের করা যায়।
এবং সে জন্য উক্ত খতিয়ান লিখিত যে রেজিস্টার সে রেজিস্টারে একটা ক্রমিক নাম্বার দেওয়া হয় উক্ত ক্রমিক নাম্বারকে খতিয়ান নাম্বার বলা হয় ।
সেক্ষেত্রে একটা মৌজার সকল মালিকের নাম এক নাম্বার থেকে শুরু করে সর্বশেষ পর্যন্ত নেওয়া হয় এবং সেখানে তাদের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে লেখা থাকে জমির বিষয়ে সকল তথ্য দিয়ে সেখানে লিপিবদ্ধ করা হয়।
প্রথম খতিয়ানের জন্য যে রেজিস্টারটা তৈরি করা করা হলো সেটাকে আমরা তলবকারী রেজিস্টার ও বলে থাকি।
এবং এই এক নাম্বার রেজিস্টার তথা যেটা খতিয়ান নাম্বার বলে থাকে এটাকে নির্ধারণ নির্ধারিতভাবে নির্ধারণ করা হয় এবং এখানে কোন প্রকার ঘষামাজা করা হয় না।
২ নাম্বার রেজিষ্ট্রার নিয়ে আলোচনা
একটা জমি খাজনা কর এবং বিভিন্নভাবে হস্তান্তর করা এবং সেটা পুনরায় রেকর্ড ভুক্ত করা বা রেকর্ড সংশোধন করা এটার জন্য তৈরি করা হয় দুই নাম্বার রেজিস্টার। যাহাকে আমরা বলে থাকি জোত নাম্বার ।
নামজারির মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া
একটা জমি যখন হস্তান্তর করা হয় এবং তিনি যখন সেটা নামজারী বা বিভিন্ন মাধ্যমে যখন রেকর্ড সংশোধন করেন তখন ঐ জোত নাম্বার থেকে জমি কর্তন করা হয় মূল খতিয়ান থেকে কর্তন করা হয় না মূল খতিয়ানে কোন প্রকার ঘষামাজা করা হয় না।
তাহলে আমরা এখান থেকে জানতে পারলাম রেকর্ড সংশোধন বা জমি হস্তান্তরের জন্য বা রেকর্ড সংশোধনের জন্য জোত থেকে সংশোধন করা হয় । মূল খতিয়ানে কোন প্রকার লেখা বা সংশোধন করা হয় না খতিয়ান নাম্বারে যে পূর্বের মালিকের নাম ছিলো তার নামই থেকে যায় । শুধুমাত্র জোত নাম্বার থেকে তার অংশটা তথা হস্তান্তরকৃত অংশটা কর্তন করা হয়।
নতুন হোল্ডিং খোলার প্রক্রিয়া
এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির নামে রেকর্ড ভুক্ত করার জন্য আবার দুইটা রেজিস্টারে রেজিস্টার ভুক্ত করা হয়। যেখানে এক নাম্বার রেজিস্টার এবং দুই নাম্বার রেজিস্টার তথা খতিয়ান নাম্বার এবং হোল্ডিং নাম্বার।
১: খতিয়ান নাম্বারে একটা জমির মালিকানার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে লিখবদ্ধ করা হয় এবং জমির অংশ এবং জমির খাজনার পরিমাণ সহ লিপিবদ্ধ করা হয়।
২: হোল্ডিং নাম্বার: জমির খাজনার পরিমাণ সহ রেকর্ড সংশোধনের বিস্তারিত তথ্যদি লিপিবদ্ধ করা হয় যাহা থেকে কতটুকু জমি পরবর্তীতে কার নামে রেকর্ড সংশোধন করা হলো সে সকল বিষয় হোল্ডিং এবং লেখা থাকে ।
জোত শব্দটি ব্যবহার করা হয় জরিপ খতিয়ানের ক্ষেত্রে । এবং হোল্ডিং শব্দটি ব্যবহার করা হয় নামজারির ক্ষেত্রে নামজারীর খতিয়ানের ক্ষেত্রে হোল্ডিং শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাহলে এখান থেকে যে তথ্যটি আজ বিস্তারিত জানতে পারলাম তা হলো জোত এবং খতিয়ান এর মধ্যে পার্থক্য। এখান থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে পারলাম যে খতিয়ান কখনো সংশোধন করা হয় না বা খতিয়ান কখনো সংশোধন করা হয় না সংশোধন করা বা খাজনা কর নেওয়া হয় এটা জোত এর মাধ্যমে। তাহলে আমরা যে খাজনা প্রদান করে থাকি সেটা লিপিবদ্ধ করা হয় জোত রেজিষ্ট্রারে এবং নামজারির ক্ষেত্রে হোল্ডিং রেজিষ্ট্রারে ।
এখানে হোল্ডিং নাম্বার বলতে আমি বুঝিয়েছি দুই নাম্বার রেজিস্টার ।এই দুই নাম্বার রেজিস্টারটি মূলত তৈরি করা হয় খাজনা কর নেওয়ার সুবিধার্থে এবং রেকর্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে সেটা লিপিবদ্ধ করার জন্য। তাহলে আজ আমরা জানতে পারলাম ।যে খতিয়ানের রেজিস্টারে কোন প্রকার লেখালেখি করার পরবর্তীতে কোন সুযোগ থাকে না।
জোত/হেল্ডিং এবং খতিয়ান নাম্বার তৈরীর প্রক্রিয়া
এখন কথা হল এই খতিয়ান নাম্বার এবং জোত নাম্বার এটা কিভাবে সাজানো হয় বা এই নাম্বার গুলো কিভাবে দেওয়া হয়। জোত নাম্বার এবং খতিয়ান নাম্বার এটা মূলত একটা রেজিস্টার এর ক্রমিক নাম্বার ।একটা রেজিস্টার যখন লিপিবদ্ধ করা হয় তার একটা তালিকা বা ধারাবাহিকতা অনুযায়ী একটা নাম্বার দেওয়া হয় । এবং যে ব্যক্তির নাম যত নাম্বার সিরিয়ালে লেখা থাকে তার জোত / খতিয়ান নাম্বার ততো হয়ে থাকে । যদি আরেকটু ক্লিয়ার ভাবে বলতে যায় তাহলে । যেমন: একটা মৌজার নকশায় উত্তর পশ্চিম কোনা থেকে প্লটের দাগ নাম্বার শুরু করা হয় – এক – নম্বর – দুই নম্বর – তিন নাম্বার – এভাবে সাজানো হয় সর্বশেষ পর্যন্ত অনুরূপভাবে একটা খতিয়ানের নাম্বার গুলোও সেভাবে এক নাম্বার দুই নাম্বার এভাবেই সর্বশেষ পর্যন্ত সাজানো হয়।
অনুরূপভাবে জোত নাম্বারটাও সেভাবে এক নাম্বার থেকে সর্বশেষ পর্যন্ত। একটা মৌজার জোত নাম্বারের তালিকা এবং খতিয়ান নাম্বার এর তালিকা এটা নির্ভর করে ওই জোতের জমির মালিকানার উপর ভিত্তি করে । যে কতজন ব্যক্তি ঐ মৌজার ভিতরে মালিকানা ভূক্ত আছে । তার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় খতিয়ান নাম্বার এবং জোত নাম্বার এবং তার ওপরে নির্ধারণ করে তাদের নাম্বার গুলো ধারাবাহিকভাবে সজানো হয় ।
যদি নাম্বারিং না করা হয় তাহলে কি হতে পারে?
এভাবে যদি নাম্বারিং না করা হয় তাহলে কোন খতিয়ান আর নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌছায় দেওয়া বা তার নির্দিষ্ট খতিয়ান তার বলে যাচাই বাছাই করা কখনো সম্ভব নয়। আমরা জানি যে কোন কিছু ব্যেক্তির নামের ওপর ভিত্তি করে সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব নয় এবং সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন নাম্বারিং দ্বারা চিহ্নিত করে যাতে একজনের খতিয়ান অন্য জনের নামে চলে না যায় । এবং একজনের মালিকানা স্বত্ব যাতে অন্য জনের নামে না চলে যায় । কেননা এক নামে একটা মৌজায় বিভিন্ন লোকজন থাকে বা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ থাকে। সুতারাং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা জমির মালিকের – খতিয়ান নাম্বার-জোত নাম্বার – জমির দাগ নাম্বার – ইত্যাদি নামকরণ করা হয় বা চিহ্নিত করা হয়। যাহাতে কারোর মালিকানা স্বত্বলিপি বা খতিয়ান অন্য কারো নামে যাওয়ার বা অন্য কারোর কাছে যাওয়ার কোন প্রকার সুযোগ না থাকে ।
আমার মন্তব্য
আশা করি আপনারা খতিয়ান নাম্বার এবং হোল্ডিং নাম্বার কি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যদি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি আপনারা আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আপনারা আমার ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ফোন করতে হবে, রাত 10:30 মিনিট থেকে থেকে 11:30 মিনিট এর মধ্যে। ফোন নাম্বার ০১৭২১৬৮৭৮৭৭।