ভূমি জরিপে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা।
১-গান্টার চেইন : প্রথমে এলিজাভেত-এর রাজত্বকালে ইংল্যান্ডের জনৈক গান্টার সাহেবের নামে চেইনটির নামকরণ করা হয় । যিনি প্রথম জরিপ কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করে চেনটির প্রবর্তন করেন । এই চেইনটি ১০০ টি অংশে বিভক্ত এবং এর প্রতিটি অংশের নাম লিংক এতে মোট ৯টি লকেট রয়েছে যাদের বলা হয় পেডন্টি প্রান্ত থেকে শুরু করে প্রতি ১০ লিংক অন্তর অন্তর একটি লকেট/ফুল থাকে। এই গানটার চেইনের দৈর্ঘ্য থাকে ৬৬ ফুট অথবা ২২ গজ অথবা ৪০ হাত প্রতিটি লিংক এর দৈর্ঘ্য ৭.৯২ ইঞ্চি এক লিংকে এক করি বলা হয় ৮০ চেইনে= ১ মাইল এই চেইনটি ব্যবহারের কারণে দৈর্ঘ্য কিছু হেরফের হবার সম্ভাবনা থাকে । তাই সকল কাজে যাবার পূর্বে এটিকে এমন প্রমাণিত দৈর্ঘ্যের সাথে মিলিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হয় এবং প্রয়োজনে মাপ ঠিক করে নিতে হয়।
২-প্লেন টেবিল: এটি একটি তিন পায়াবিশিষ্ট টেবিল – এবং এর পায়া সমূহ্যে স্ক্রুপ লাগানো থাকে যাতে করে খুব সহজে এটাকে উচা করা বা নিচু করতে সুবিধা হয়।
এবং এই টেবিলের ওপর পি ৭০ সিট বা ব্লুপ্রিন্ট সিট রেখে মাঠ জরিপের মাঠের কেস্তোয়ারার কাজ সম্পাদন করা হয়।
টেবিলটি সাধারণত তিন বর্গফুট পরিমাণ হয়ে থাকে প্রয়োজনে পায়া সমূহ ভাস করে সুবিধা জনক ভাবে বহন করা যায়।
৩-পিন: জরিপ কাজের চেইন দিয়ে পরিমাপ করার সময় চেইনের দূরত্বকে চিহ্নিত করার জন্য সেখানে ব্যবহার করা হয় পিন বা অ্যারো – যেটার দৈর্ঘ্য দেড় ফুট মত হয়ে থাকে। শিকল দিয়ে পরিমাপ করার সময় এই ১০ টি পিন অগ্রগামীর হাতে থাকে। অগ্রগামী চেনের দৈর্ঘ্য নেওয়ার পরের নির্দিষ্ট স্থানে পিন পুতে দেয় এবং অনুগামী ওই পিন সংগ্রহ করে আবার সংগ্রহ করে এক সাথে ১০ পিন সংগ্রহ করা শেষ হলে মোট দৈর্ঘ্যটা লিপিবদ্ধ করে ।এভাবে যখন অগ্রগামের হাতের ১০ টা পিন যখন শেষ হয়ে যায় এবং অনুগামী হাতে যখন দশটা পিন যখন সংগ্রহ করেন তখন তাদের পরিমাপকৃত দৈর্ঘ্য দশটি 100×10=1000 লিংক হিসেবে প্রমাণিত হয়।
৪-স্পেড: জরিপ কাজের সময় জমিতে দাগ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় কোদাল ।
৫-অফসেট স্কেল: নকশায় কেস্তোয়ারা করার সময় চেইন লাইনের ডানে-বামে এক চেইন পর্যন্ত অফসেট বা দূরত্ব পরিমাপের জন্য এই স্কেল ব্যবহার হয় । এটি একটি সাদা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র স্কেল ১৬ ইঞ্চি সমান ১ মাইল স্কেলের প্রতি দুই ঘরের মধ্যবর্তী দূরত্ব সমান ২০ লিংক এই স্কেলটিকে চলিত ভাষায় গুনিয় বল বলা হয়।
৬-ম্যাপ পট: মাঠের জরিপের কাজ করার সময় নকশা ম্যাপ যত্ন সহকারে রাখার জন্য গোল প্লাস্টিক বা টিনের এই ম্যাপ-পট ব্যবহার করা হয়। যাতে নকশা বা সিট গুলো যত্ন সহকারে ভালো থাকে ।
৭-অয়েল ক্লথ: প্লেন টেবিলের উপরে সিট বসানোর পর যাতে ধুলাবালি বা হাতের ময়লা লেগে নষ্ট না হয় । সেজন্য প্লাস্টিকের দ্বারা ঢেকে রাখা হয় । এই প্লাস্টিক কেই অয়েল ক্লথ বলা হয়।
৮-ডিভাইডার: এটি একটি সাধারণ জ্যামিতিক ডিভাইডার যা জরিপ কাজে বহুল ব্যবহৃত হয় । চেইনের আনুপাতি হারে সংকুচিত করে দূরত্ব গুলো কিস্তোয়ারার শীটে বসিয়ে দূরত্ব ঠিক করা হয়।
৯-ডায়গনাল স্কেল: এটি একটি চতুষ্পদ স্কেল – সাধারণত পিতল – তামা – দস্তা -ও সংকর – দিয়ে তৈরি হয়। এর মাধ্যমে মাঠ জরিপে প্রাপ্ত দূরত্ব কে নির্দিষ্ট স্কেলে আনুপাতিক হারে সংকুচিত করে ডিভাইডার এর মাধ্যমে কিস্তোয়ারা নকশায় স্থাপন করা হয়।
১০-অপটিক্যাল স্কোয়ার: যে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র যন্ত্র এই যন্ত্রের দুটি ছোট্ট আইনা থাকে জরিপকর্মী চেইন লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় এর ডানে অথবা বামে উল্লেখযোগ্য মাঠ ও নিশানা বা চোখে পড়লে তাহা থেকে চেইনের লাইন পর্যন্ত আয়নার ভিতর দিয়ে দৃষ্টি দিয়ে লম্ব দূরত্ব অবস্থান নেন।
১১-এককর কম্ব: এটি একটি চিরুনির মতো ধাতব যন্ত্র – যার মাধ্যমে নকশায় দাগসমূহের পরিমাপ গ্রহণ করে স্কেলের উপর বসিয়ে এরিয়া নির্ণয় করা হয়। এর প্রতি দুটি দাঁতের মধ্যবর্তী দূরত্ব এক চেইন।
১২-কম্পাস: জরিপ চলাকালে দিক নির্ণয়ের জন্য জরিপ কর্মীগণ এই যন্ত্র ব্যবহার করে।
১৩-স্পিরিট লেবেল: একটা জরিপ পরিচালনা করার সময় পেলেন টেবিল সহ সকল জরিপের বিভিন্ন যান্ত্র স্থাপনা করার ক্ষেত্রে এই স্পিড লেভেল ব্যবহার করা হয়। যাতে একটা যন্ত্র স্থাপন করার ক্ষেত্রে সমতল হয়।
১৪-প্যান্টাগ্রাফ: এটা কার্ড অথবা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। এটা কাঠ বা প্লাস্টিকের ছোট দণ্ড সময়কে স্ক্রুপ লাগিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত এ যন্ত্র দিয়ে কোন একটি নকশা চিত্র বা গ্রাফকে আনুপাতিক হারে বড় ও ছোট করা যায়। এই পেন্টাগ্রাফ যন্ত্রটি এটা নকশা অংকনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
১৫-নল: এটি একটি বাঁশের দন্ড যার দৈর্ঘ্য ২০ লিংক – জরিপ চলাকালীন চেইন লাইনের ডানে বামে অফসেট ও দূরত্ব অথবা কোন স্বল্প দূরত্ব এর সাহায্যে গ্রহণ করা হয় একে লগি ও বলা হয়।
১৬-ফ্ল্যাট রুলার: ফ্ল্যাট রোলার – এটা এক ধরনের স্কেল এটা নকশার রেখা অঙ্কন করার জন্য অথবা বিন্দু সমূহ্যের সংযোগ ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ফ্ল্যাট রোলার স্কেল।
১৭-হোয়াইট ফ্ল্যাগ: জরিপ চলাকালীন লাইনের প্রান্ত অথবা কোন বিশেষ পয়েন্ট থেকে দূরত্ব নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় এই ফ্ল্যাগ তথা সাদা পতাকা স্থাপন করা হয় এই সাদা পতাকা স্থাপন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় হোয়াইট ফ্ল্যাক পদ্ধতি।
১৮-রোপ: জরিপ কারীদের ব্যাবহারিত দড়ি বা রশিকে বলা রোপ।
১৯-সাইট ভেন: থিওডোলাইট যন্ত্র ব্যবহার করে মৌজার ট্রেভার্স বা স্টেশনসমূহ্য পি-৭০ সিটে নির্ধারণ করে রাখা হয়। কিন্তু মাঠ জরিপের সময় কোন ট্রাভাস স্টেশন মাঠে খুঁজে পাওয়া না গেলেলে সাইটের ভেন নামক যন্ত্রের সাহায্যে জ্যামিতিক নিয়মে একটি ট্রাভাস স্টেশন নির্ধারণ করা হয়। সেখানে কানুনগো এবং জরিপকারী মাঠে সাইট-ভেন ব্যবহার করে এই ট্রাভাস স্টেশন নির্ণয় করে।
২০-ক্লিনোমিটার: জরিপের সময় কোন উচ্চ বা ভৌগলিক স্থান বা পাহাড়ের উচ্চতা পরিমাপ করার জন্য এই কিলোমিটার যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় । এই কিলোমিটারের সাহায্যে উচ্চ স্থানের পরিমাপ করা হয়।
২১-ডিস্টোমেট: এটা জরিপ কাজে ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। যার মাধ্যমে একটি সমান্তরাল দূরত্ব যাহা শিকল দিয়ে পরিমাপ করা যায়না তাহা পরিমাপ করা হয়।
২২-থিওডোলাইট: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ সহায়ক যন্ত্র যার মাধ্যমে জরিপের প্রাথমিক কাজ করা হয় । মৌজার ভূমি ও শীটের ট্রাভাস স্টেশন সমূহ এই যন্ত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। আকাশে অবস্থিত ধ্রুবতারার সাথে কোন সৃষ্টি করে থিওডোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপযোগ্য মৌজার বহির সীমানা নির্ধারণের জন্য স্টেশন চিহ্নিত করা হয়।